জামালপুরের ইসলামপুরে ‘গলুই’ সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় অডিটোরিয়াম ভাড়া করে সিনেমা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার পর জেলা প্রশাসন এ নির্দেশনা দিয়েছে বলে দাবি করেন সিনেমাটির প্রযোজক ও পরিচালক।
প্রশাসন বলছে, বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শন করতে হলে লাইসেন্স করা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শন করতে হবে। যেহেতু অডিটোরিয়াম বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শনের লাইসেন্স করা কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, তাই সেখানে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না।
প্রথমে অর্থাৎ ঈদের দিন গলুই প্রদর্শিত হয় জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে। কিন্তু সেখানে আসন সংখ্যাসহ অন্য কিছু অসুবিধার কারণে সিনেমা প্রদর্শনের ভ্যেনু পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয় মির্জা আজম অডিটরিয়ামে। এর পরই প্রশাসন থেকে আসে প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ।
জেলা কালচারাল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে ৭ দিনের অনুমতি নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গলুই সিনেমা চালাই। পরে সিনেমাটির কর্তৃপক্ষ তাদের নানা অসুবিধার জন্য এটি জামালপুর পৌরসভার সামনে মির্জা আজম অডিটরিয়ামে দেখানোর ব্যবস্থা করে। সেখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না সেটা আমার জানা নেই।’
মঙ্গলবার থেকে জামালপুর সদর ও মাদারগঞ্জ উপজেলাতে সিনেমাটি প্রদর্শন না করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এ নির্দেশনা কোনো চিঠির আদেশে হয়নি বলে জানান গলুই সিনেমার সংশ্লিষ্টরা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান জানিয়েছেন, তারা এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। তিনি বলেন, ‘গলুই সিনেমা বন্ধে আমরা কোনো নির্দেশনা দেইনি। আপনাদের যারা এসব বলেছে তাদের নির্দেশনাপত্র দেখাতে বলেন।’
গলুই সিনেমার পরিচালক এস এ হক অলিক বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইসলামপুরে গত শনিবার থেকে গলুই সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও মঙ্গলবার থেকে জামালপুর সদরের মির্জা আজম অডিটরিয়ামে এবং মাদারগঞ্জে গলুই সিনেমা চালানো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘এ বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, ১৯১৮ সালের এক আইন অনুযায়ী প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘১০৪ বছর আগের আইন কতটা কার্যকরী? আর জামালপুরে কোনো সিনেমা হল নেই। তাহলে আমরা সিনেমা প্রদর্শন করব কোথায়? এই সিনেমাতে জামালপুরের শত শত নাট্য কর্মী অভিনয় করেছে। এ ছাড়াও দর্শকরা অনেক আগ্রহ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমাটি দেখছে।’ এস এ হক অলিক জানান, এই ঘটনায় তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সারা দেশে গলুই সিনেমার যে ভাবমূর্তিটি নষ্ট হলো তা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা সম্ভব না।
তিনি জানান, গলুই সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সেখানে ১০৪ বছরের পুরাতন আইনে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ কতটা যুক্তির। সিনেমার প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘ইসলামপুরে গলুই সিনেমার দুটি শো’র অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা ছিল। তাদেরকে টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। এ সমস্যা নিয়ে আমার মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শিগগিরই কথা বলব।’
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘গত পরশু থেকে গলুই সিনেমা বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় আমরা এটি বন্ধ করে দিয়েছি।
‘এর কারণ হচ্ছে, বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শন করতে হলে লাইসেন্স করা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এটি দেখাতে হবে। তার মানে প্রেক্ষাগৃহে এটি দেখাতে হবে। আর লাইসেন্স করা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাদে অন্যকোনো জায়গায় এটি দেখাতে হলে বিনামূল্যে দেখাতে হবে। যেহেতু অডিটরিয়ামে দেখানো হচ্ছে তাই এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
গলুই সিনেমা প্রদর্শন হচ্ছে না জেনে মনক্ষুন্ন দর্শকরাও। ইসলামপুরে সিনেমা দেখতে আসা তন্ময় সাকিব নামে এক দর্শক বলেন, ‘অনেক আগ্রহ নিয়ে সিনেমাটি দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে শুনি সিনেমাটি বন্ধ। কথাটি শুনে অনেক খারাপ লাগলো।’
জামালপুরের নাট্যকর্মী সাগড় মূখার্জী বলেন, ‘গলুই সিনেমায় আমরা জামালপুরের শত শত নাট্যকর্মী অভিনয় করেছি। এখন এই সিনেমাটি জামালপুরে প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় দেখান যাবে না, এটি খুবই খারাপ লাগার একটি বিষয়। আমরা চাই প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুক।’