Tags: কৃষক, দিনাজপুর, ধান, ফুলবাড়ী
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত দু’দিনের ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাতে ক্ষেতের আধাপাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উঠতি আধাপাকা ধান পানিতে নুয়ে পরার কারণে জমিতেই শীষের ধান ঝরে পড়ছে।
এসব জমির ধান কাটতে এলাকা ভেদে কৃষকদের প্রতি হেক্টরে খরচ পরছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এর পরেও অনেক জায়গায় শ্রমিক মিলছে না। ধান কর্তনে অতিরিক্ত খরচ ও ধানের ফলন বির্পযয়ের কারণে ব্যাপক লোকসানের কবলে পরেছেন বোরো চাষিরা। এই এলাকায় কৃষকদের কিছুটা লোকসান কেটে ওঠতে প্রনোদনা বা ভূর্তকি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি বোরো মৌসুমে উপজেলা জুড়ে প্রায় ১৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান রোপন করেছেন কৃষকরা। শুরুতেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং তেমন রোগবালাই না থাকায় ধানের ফলনও ভাল হয়েছে। ধান কাটার শুরুতেই বিঘা প্রতি (৩৩ শতক) ২২ থেকে ২৬ মন ধান হয়েছে। গত কয়েক দিনের ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উঠতি আধা পাকা ধান একেবারে মাটিতে নুয়ে পরেছে।
কৃষকরা বলছেন, ঈদের আগেই অধিকাংশ জমির ধান পাকলেও ঈদের কারণে পর্যাপ্ত শ্রমিক আসেনি। ফলে ধান কাটতে দেরি হয়েছে। এরই মধ্যে গত কয়েক দিনের ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতে জমির ধানগুলো মাটিতে নুয়ে পরেছে। ধানের শীষ পানির সাথে মিশে থাকায় ইতোমধ্যে জমিতেই শীষ থেকে ধান ঝরে পড়ছে। এসব ধান কাটতে একদিকে যেমন পর্যাপ্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। অন্য দিকে ফলনও কম হচ্ছে আবার বাজারে বিক্রিতে দরও ভাল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ব্যপক লোকসানে পরেছেন কৃষকরা।
উপজেলার চকচকা গ্রামের কৃৃষক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এবার তিনি প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ঈদের আগে দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পারলেও এখনো অবশিষ্ট জমিতে পাকা ধান রয়েছে। গত দু’দিনের ঝড়োবৃষ্টিতে ১৯ বিঘা জমির ধানগাছ নুয়ে পড়ে পানির মধ্যে তলিয়ে রয়েছে। গতকাল শনিবার বিঘাপ্রতি সাড়ে ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ধান কাটতে দেওয়া হয়েছে কৃষি শ্রমিকদেরকে।
আলাদিপুর গ্রামের কৃষক তারাপদ রায় বলেন, ৭ বিঘা জমির মধ্যে বৃষ্টির আগে চার বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছেন। বাকি ৩ বিঘা জমির ধান মাটিতে নুয়ে পরার কারণে ধানের শীষ থেকে ধান ঝরে পড়েছে মাটিতে। ওই নুয়ে পড়া ধান কাটতে সাড়ে ৬ হাজার টাকা বিঘা চুক্তি দিয়েছেন শ্রমিকদেরকে।
ভিমলপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, মাটিতে নুয়ে পরা ধান কাটতে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা বিঘা চুক্তি দিয়েছেন। বর্তমানে বিঘা প্রতি ধানের ফলন হচ্ছে ২২ থেকে ২৬ মন। ওই ধান হাটবাজারে ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে ব্যাপক লোকসানের কবলে পরেছেন। কৃষকদের লোকসান কেটে ওঠতে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত প্রনোদনা বা ভুর্তকির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, ঝড়োহাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ধানের শীষসহ গাছ ক্ষেতের মাটিতে নুয়ে পরেছে। তবে বর্তমানে শীষের ধান পাকা থাকায় এবং হারবেস্টার মেশিন দিয়ে নুয়ে পড়া ক্ষেতের ধানও কাটা যাবে। তবে মজুর দিয়ে ধান কাটতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে কৃষকদের। ইতোমধ্যে উপজেলা জুরে ৫০ ভাগেরও বেশি পরিমাণ ক্ষেতের ধান কর্তন করা হয়েছে। আগামী সপ্তারেহ মধ্যে ধান কর্তন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।