Tags: ফরিদপুর, ভিজিডি চাল, সালথা
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার দুস্থ মহিলাদের পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষে প্রতি মাসে ভিজিডির ৬৭.২৯০ মেট্রিক টন চালে মেশানো হচ্ছে না পুষ্টি। ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে দুস্থ নারীদের পুষ্টি উন্নয়নের বিপরীদে পুষ্টি মেশানো চাল না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে হচ্ছে এ সকল এলাকার ভিজিডি কার্ডধারী গরিব মানুষদের।
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির কারিগরি সহযোগিতায় ভিজিডি কর্মসূচির উপকারভোগী নারীদের পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর।
দেশের দরিদ্র মানুষের দেহে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৯ (ফলিক এসিড), আয়রন এবং জিঙ্ক -এই ছয়টি পুষ্টি ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশু-কিশোরদের ভেতর এ সমস্যা বেশি। আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত তাই চাল যদি পুষ্টিসমৃদ্ধ করা যায়, সেজন্য সরকার প্রাথমিকভাবে খাদ্যশস্যভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র জনগণের পুষ্টি ঘাটতি মেটানোর জন্য হতদরিদ্রদের ভিজিডি কর্মসূচিতে পুষ্টিচাল বিতরণ করেন।
সাধারণ চালের সঙ্গে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৯ (ফলিক এসিড), আয়রন এবং জিঙ্ক -এই ছয়টি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দানাদার চাল বা কার্নেল উৎপাদন করা হয়। পরে সাধারণ চালের সঙ্গে ১০০:১ অনুপাতে কার্নেল মিশিয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ চাল (ফর্টিফাইড রাইস) প্রস্তুত করা হয়। প্রতি ১০০টি সাধারণ চালের সঙ্গে একটি পুষ্টিচাল অর্থাৎ ১০০ কেজিতে এক কেজি হারে পুষ্টিচাল মেশানো হয়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড় করে দেয় মিশ্রণ মেশিন। এ চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়, এতে চালের স্বাদের কোনো পরিবর্তন হয় না।
সালথা উপজেলা মহিলা বিষয়ক ও খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে ৩০৯, গট্টি ইউনিয়নে ৪৩৫, রামকান্তুপুর ইউনিয়নে ২৩০, ভাওয়াল ইউনিয়নে ২৭৩, সোনাপুর ইউনিয়নে ২৮২, বল্লভদী ইউনিয়নে ২৫১, মাঝারদিয়া ইউনিয়নে ২৩৫ ও যদুনন্দি ইউনিয়নে ২২৮টি ভিজিডি কার্ড রয়েছে। এখানে প্রতি কার্ডের বিপরীতে ৩০ কেজি করে চাল ও ৩০০ গ্রাম কার্নেল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই উপজেলায় মোট ২২৪৩ টি ভিজিডি কার্ডের বিপরীতে ৬৭. ২৯০ মেট্রিক টন চাউল ও ৬৭৩ কেজি কার্নেল বরাদ্দ রয়েছে।
মাঝারদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা উজ্জল মাতুব্বর বলেন, পুষ্টিচাল দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেসব মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে, সরকার চালের মধ্যে ছয়টি খাদ্য উপাদান দিচ্ছে এতে পুষ্টির ঘাটতি সহজেই দূর হওয়ার কথা কিন্তু সালথা উপজেলার কোন ইউনিয়নে গত তিন মাসে পুষ্টি মিশানো চাউল দেওয়া হয়নি। এতে স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে হচ্ছে এ সকল এলাকার ভিজিডি কার্ডধারী গরিব মানুষদের।
আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল হাসান খান সোহাগ বলেন, তিন মাস ধরে সালথা উপজেলায় কোন পুষ্টিচাল দেওয়া হচ্ছে না এতে অতি দরিদ্ররা স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে পারে। আমি সংশ্রিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ করবো এসকল গরিব মানুষের জন্য অতি দ্রুত পুষ্টি চালের ব্যবস্থা করার জন্য।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলি বলেন, তিন মাস আগে নিয়মনুযায়ী ভিজিডির রফতানিকৃত চাল পুষ্টি মেশানোর প্রতিষ্ঠান বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিটেড আমাদের গোডাউন থেকে নিয়ে পুষ্টি মিশিয়ে নিম্নমানের চাল সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদে সরবারহ করেন। এতে পুষ্টি মেশানো প্রতিষ্ঠান বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে । এই মামলা প্রক্রিয়াধীন থাকায় আমরা পুষ্টি ছাড়াই সাধারন চাউল বিতরন করছি।
সালথা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তারিকুজ্জামান বলেন, আমি ফরিদপুর উপজেলা সদরে খাদ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছি এবং একই সাথে সালথার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। আমি সালথায় নতুন এসেছি তবে বিষয়টি জানতে পেরে আমি সালথায় ভিজিডি খাতের চালে পুষ্টি মিশ্রনের জন্য নতুন পুষ্টি মিল নির্বাচন বা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষ্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র দিয়েছি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা: তাছলিমা আকতার বলেন, খাদ্য অধিদপ্তর থেকে এখনো কোন পুষ্টি মেশানো মিলার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমারা সাধারণ চাউল বিতরন করছি। নতুন পুষ্টি মেশান মিললার নির্বাচনের জন্য আমরা উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি।